স্বদেশ ডেস্ক:
রাতের আঁধারে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) সীমানা প্রাচীর ভেঙে পুকুর ভরাটের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় দুই লাখের বেশি আর্থিক ক্ষতি হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের সীমানা প্রাচীর ভেঙে সেখান দিয়ে ট্রাক বহনের অনুমতি দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক আনন্দ কুমার সাহার সচিব প্রদ্বীপ কুমার।
এদিকে এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণে রাজশাহী নগরীর চন্দ্রিমা থানায় একটি মামলা দায়ের করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক মো. আব্দুস সালাম বাদি হয়ে মামলাটি দায়ের করেন।
চন্দ্রিমা থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো. মইনুল বাশার জানিয়েছেন, এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ ছাড়া ঘটনার সঙ্গে জড়িত বাকিদেরও গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে বলে জানান তিনি।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, গত শুক্রবার রাত ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কবরস্থানের পাশে সীমানা প্রাচীর ভেঙে ট্রাকে করে বালু নিয়ে অন্য কারও পুকুর ভরাট করে অজ্ঞাত ব্যক্তিরা। তারা সীমানা প্রাচীর ভেঙে প্রায় দুই লাখ টাকার ক্ষতি সাধন করে এবং অনধিকার প্রবেশ করে দেশের প্রচলিত আইন অমান্য করেছে।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্টরা অভিযোগ করেছেন, রাজশাহী বন বিভাগের একজন মালি নিজের পুকুর ভরাটের জন্য রাবির সীমানা প্রাচীর ভেঙে বালু তুলে নিয়ে যাচ্ছিলেন। জামালপুর বস্তি সংলগ্ন বিশ্ববিদ্যালয় কবরস্থানে ওই সময় দায়িত্বে ছিলেন প্রহরী হারেজ। তিনি বিষয়টি প্রশাসনকে জানান।
হারেজ গণমাধ্যমকে জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক আনন্দ কুমার সাহার সচিব প্রদ্বীপ কুমার ও কৃষি প্রকল্পের সেকশন অফিসার মো. সাজ্জাদ হোসাইন সীমানা প্রাচীর ভাঙার বিষয়টি জানেন। তাদের নির্দেশেই সীমানা প্রাচীর ভেঙে সেখান দিয়ে মাটি নিয়ে যাচ্ছিল বহিরাগতরা। এ বিষয়ে জানতে সাজ্জাদ হোসেনকে ফোন করা হলে তিনি গণমাধ্যম কর্মীদের সঙ্গে রাগান্বিত স্বরে কথা বলেন। তিনি জড়িত নন বরং উপরের নির্দেশে এটি হয়েছে বলে জানান।
অভিযোগের বিষয়টি স্বীকার করে উপ-উপাচার্য অধ্যাপকের সচিব প্রদ্বীপ কুমার বলেন, ‘মাটি কিংবা গরু-ছাগল নিয়ে যাওযার জন্য ওই জায়গার আগাগোড়াই ভাঙা ছিল। বছরের পর বছর জায়গাটি মেরামত করি আবার এলাকাবাসী ভেঙে দেয়। এভাবেই চলছিল। এরই মধ্যে গত শুক্রবার ওই এলাকার কয়েকজন ব্যক্তি এসে বলেন, দুই ট্রাক মাটি ওই জায়গা দিয়ে নিয়ে কৃষি প্রকল্পের জমিতে রাখবে। পরে ঢাকিতে করে তা তাদের নিদিষ্ট স্থানে অপসারণ করবে। তারপর যেটি জানতে পারি ভাঙা অংশটি দিয়ে মাটির পরিমাণ বেশি নিয়ে যাওয়া হয়েছে। বিষয়টি জানতে পেরে তাৎক্ষণিকভাবে জায়গাটি দিয়ে মাটি বহন করা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘মাত্র দুই ট্রাক মাটি নিয়ে যাবে এই ভেবে এলাকাবাসীর স্বার্থের কথা ভেবে আমি অনুমতি দিই। তবে মাটি নিয়ে যাওয়ার সময় হয়তো জায়গাটি ভেঙে গিয়েছিল। তবে আজ রোববার দুপুরের মধ্যেই এলাকাবাসী ভাঙা প্রাচীর নিজ খরচে ভালো করে দেবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।’
প্রদ্বীপ কুমার আরও বলেন, ‘ভেবেছিলাম অনুমতি না দিলে এলাকাবাসী ঝামেলা করতে পারে। আমাদের ওই এলাকাতে প্রায় ৬০০ আম গাছ রয়েছে। অনুমতি না দিলে তারা একদিনেই আমগাছগুলো কেটেও ফেলতে পারে। এর আগে সামান্য বাগান লিজ না দেওয়ার কারণে গোটা বাগান পুড়িয়ে দিয়েছিল।’
এদিকে বিশষ্ববিদ্যালয়ের বেশ কয়েকজন শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারি অভিযোগ করে বলেন, ‘রাবি উপাচার্য অধ্যাপক এম আব্দুস সোবহানকে প্রশ্নবিদ্ধ করতেই উপ-উপাচার্য অধ্যাপক আনন্দ কুমার সাহার সচিব উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এমন কাণ্ড ঘটিয়েছেন। কারণ হিসেবে তারা বলছেন, বহিরাগতদের বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাচীর ভেঙে বিশ্ববিদ্যালয়ের জায়গা ব্যবহার করার অনুমতি একজন উপ-উপাচার্যের সচিব দিতে পারেন না। এটিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ কর্তাব্যক্তি তথা উপ-উপাচার্যকে নতুন করে প্রশ্নবিদ্ধ করার গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবেই মনে করছেন তারা।
এ প্রসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক এম আব্দুস সোবহান বলেন, ‘ওই এলাকার দায়িত্বরত প্রহরীর মাধ্যমে আমরা খবর পাই। সঙ্গে সঙ্গে পুলিশকে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেই। কুচক্রী মহল সীমানা প্রাচীর ভেঙে এ ধরনের অপকর্ম করার চেষ্টা করছিল। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে তারা এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়েছে।’ এ ঘটনায় রাবির কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারি জড়িত থাকলে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান তিনি।